Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে নিরাপদ বেবী ভুট্টা

যে  সকল ভুট্টার মোচা কঁচি  অবস্থায় (পরাগায়ণ হয়তো  কেবলমাত্র সংঘটিত হয়েছে অথবা হয়নি) ব্যবহার করা হয় তার  নামকরণ  হয়েছে বেবী ভুট্টা (baby)। সাধারণ ভুট্টা (field corn), মিষ্টি ভুট্টা (sweet corn) অথবা খই ভুট্টা (pop corn) এর হাইব্রিড বা মুক্ত পরাগায়িত  যে কোন জাতকেই বেবী ভুট্টা  হিসেবে ব্যবহার করা যায় যদি তা থেকে গুণগত মানসম্পন্ন মোচা পাওয়া যায়। তবে শুধুমাত্র বেবী ভুট্টা  হিসেবে ব্যবহারের জন্য উদ্ভাবিত জাতও আছে। বেবী ভুট্টা হিসেবে চাষকৃত জাতের কিছু  বৈশিষ্ট্য হলো এ জাতগুলো আগাম প্রকৃতির ও মাঝারি উচ্চতা বিশিষ্ট হয় এবং  গড়ে প্রতি গাছে ৩-৪টি মোচা ধরে, ফলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।  জাতগুলো হাইব্রিড হলে মোচার গুণগত মানের ও ফসল সংগ্রহের সমতা থাকে বলে গ্রহণযোগ্যতা বেশি হয়। বেবী ভুট্টার খাদ্যমান ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমাটো, বেগুন ও  শসার সাথে তুলনীয়। বেবী ভুট্টা  সংগ্রহের সময় পুরো গাছটি এবং মোচার খোসা (husk) কাঁচা থাকে বিধায়  উওম গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় যা  একটি বাড়তি লাভজনক দিক।


থাইল্যান্ড বর্তমানে বিশ্বের প্রধান বেবী ভুট্টা উৎপাদক দেশ এবং বিশ্ব রপ্তানি বাণিজ্যের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো প্রধানত বেবী ভুট্টার ভোক্তা হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোই এর উৎপাদক। বাংলাদেশে  আমদানিকৃত বেবী ভুট্টার পুরোটাই ক্যানিং করা থাকে। এ দেশে উৎপাদিত বেবী ভুট্টা খোসাবিহীন অবস্থায় পলিব্যাগে বাজারজাত করা হয় যার প্রধান ক্রেতা চাইনিজ রেস্তোরাঁগুলো। বেবী ভুট্টার উপাদেয় ও সুমিষ্ট স্বাদ ভোজনরসিকদের কাছে সমাদৃত করেছে। বেবী ভুট্টাকে সবজি হিসেবে বা স্যুপ তৈরির উপাদান হিসেবে যেমন ব্যবহার করা যায় তেমনি টাটকা বেবী ভুট্টা সালাদ হিসেবে বা আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া  সীমিত আকারে যুক্তরাষ্ট্র ও  ইউরোপে হিমায়িত বেবী ভুট্টা প্রায়শ বিভিন্ন  খাবার তৈরীর উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।


বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ কয়েক বছর হতে বেবী ভুট্টার উপযোগী জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে  কাজ করছে। থাইল্যান্ড থেকে আনা কিছু হাইব্রিড ও মুক্ত পরাগায়িত  জাত হতে বাছাইয়ের মাধ্যমে  ২টি মুক্ত পরাগায়িত জাত (বিবিসি ০১ ও বিবিসি ০২) বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভালো বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে কৃষক পর্যায় চাষাবাদের জন্য ছাড়করণের পূর্বে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার  প্রয়োজন।  


চাষাবাদ পদ্ধতি
বেবী ভুট্টার চাষাবাদ অর্থাৎ জমি তৈরি, বীজ  বপনের  সময়, আন্তঃপরিচর্যা, কীটপতঙ্গ, রোগ ও বালাই দমন  সাধারণ  ভুট্টা চাষের অনুরূপ। তবে জমিতে গাছের ঘনত্বের উপর বপন পদ্ধতি, সারের  মাত্রা ও বীজের পরিমাণের তারতম্য হয়। এছাড়া স্বল্পমেয়াদি বলে বছরে একই জমি থেকে কমপক্ষে ৩টি ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব। বেলে ও  ভারী এঁটেল মাটি ছাড়া অন্যান্য সব মাটি বেবী ভুট্টা  চাষের উপযুুুক্ত  হলেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর বেলে দোঁআশ  বা দো-আঁশ মাটিই উত্তম। মাটি ৩ - ৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে বীজ বপনের আগে ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হয় যাতে সেচ ও বৃষ্টির পর জমিতে পানি না দাঁড়ায়। খরিপ  মৌসুমে উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করতে  হবে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রায় সারা বছরই বেবী ভুট্টা চাষ করা গেলেও রবি মৌসুমে ফলন বেশি হয়। সাধারণ  ভুট্টার মত রবি (অক্টোবর-নভেম্বর)  খরিপ -১ (১৫ই ফেব্রæয়ারী-১৫ই মার্চ) ও  খরিপ- ২ ( জুলাই-আগস্ট) মৌসুমে বীজ বপন করা সম্ভব । অতি বৃষ্টিতে বীজ পঁচে যেতে পারে ও নিম্ন তাপমাত্রায় অঙ্কুরোদগমে সমস্যা হয় বিধায়  এ সময় বীজ  বপন  না করাই উত্তম। সারি থেকে  সারির দূরত্ব ৫০-৬০ সেমি. এবং গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ১৫-২০ সেমি. অনুসরণ করা যেতে পারে। সারিতে ২.৫-৩.০ সেমি. গভীরে  প্রতি গোছায় ১-২টি বীজ বপন করতে হবে।  বেবী ভুট্টা চাষে বিভিন্ন রাসায়নিক  সারের মাত্রা ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড যথাক্রমে ২২০-৩৫০, ১৪০-২২৫, ১০০-১৬০, ৭৫-১২০, ১০-১৪, ৫-৮ কেজি /হেক্টর। বীজ রোগবালাইমুক্ত করার জন্য বপনের আগে শোধন করা উচিত, যা চারা গাছকে প্রাথমিকভাবে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। জমিতে গাছের ঘনত্ব ও জাতভেদে হেক্টরপ্রতি ৩৫-৬০ কেজি  বীজের  প্রয়োজন হয়। তবে অঙ্কুরোদগম ৯০ শতাংশের কম হলে   আনুপাতিক হারে বীজের পরিমাণও বাড়বে। রবি মৌসুমে মাটিতে রসের তারতম্য  ভেদে ১-২ বার  সেচের প্রয়োজন হতে পারে। বীজ বপনের আগে জো না  থাকলে হালকা সেচ দিয়ে জো হওয়ার পর বীজ বপন করলে অংকুরোদ্গম ভাল হবে। বীজ গজানোর ২০-২৫ দিন পর প্রথম সেচ এবং ৫০-৫৫ দিন পর দ্বিতীয় সেচ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মঞ্জুরিদণ্ড অপসারণ (Detasseling)  
পরাগায়ণ  রোধে বেবী ভুট্টা  চাষে সাধারণত মঞ্জরিদণ্ড (tassel) অপসারণ করা হয়। কারণ পরাগায়ণ হলে ডিম্বকের নিষিক্তকরণ ও গর্ভাশয় বৃদ্ধির ফলে মোচার গুণগতমান খারাপ হয় এবং বাজারমূল্য কমে যায়। কাজেই পুরুষফুল হতে পরাগরেণু ঝরার পূর্বে এবং মোচার মাথায় সিল্ক বের হওয়ার পূর্বেই  হাত দিয়ে টেনে মঞ্জরিদণ্ড অপসারণ করতে হয়। মঞ্জরিদণ্ড অপসারণ আগাম ফসল  পেতে  ও মোচার সুষম বৃদ্ধিতে  সহায়তা করে । তাছাড়া এর ফলে গাছে মোচার সংখ্যা ও গুণগতমান বৃদ্ধি  পায় ।
 

মোচা সংগ্রহ
মোচার মাথায় সিল্ক আসার পূর্বে অথবা সিল্ক আসা মাত্রই (১-২ দিন) এবং পরাগায়ণের পূর্বে মোচা সংগ্রহ করতে হয়। জাতভেদে  এই সময়  সিল্কের দৈর্ঘ্য ১-৩ সেমি.   হয়ে থাকে। সাধারণত পুরুষফুল  অপসারণের ৩ থেকে  ৫ দিনের  ভেতর মোচা সংগ্রহের উপযুক্ত হয়ে  থাকে ।  ভুট্টার মোচা এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে, উপযুক্ত  সময়ের ১ থেকে ২ দিন পর সংগৃহীত  মোচা মানসম্পন্ন থাকে না এবং স্বাভাবিকভাবে বাজারমূল্য কমে যায়। জাতভেদে মোচা  সংগ্রহের সময়ের তারতম্য হওয়ায় সতর্ক ও যথাযথ  পর্যবেক্ষণের  মাধ্যমে উপযুক্ত সময় ঠিক করে নিতে হয়। সকালের ঠাণ্ডা আবহাওয়া মোচা  সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। কারণ এই সময় মোচার আর্দ্র্রতার পরিমাণ সর্বাধিক থাকে। গাছের উপর হতে মোচা সংগ্রহ শুরু হয় এবং ক্রমে তা নিচের দিকে প্রসারিত হয়।  প্রতিদিন মোচা সংগ্রহ করা ভাল। প্রথম মোচা সংগ্রহের ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে  গাছের বাকি মোচাগুলো সংগ্রহ করা যায়।  প্রতি গাছে ৩-৪ টি মোচা থাকলেও  গড়ে  ২-৩ টির বেশি বেবী ভুট্টার জন্য মানসম্পন্ন মোচা সংগ্রহ করা যায় না। মোচা ছুরি বা সিকেচার দিয়ে  কেটে সংগ্রহ করা ভাল। হাত দিয়ে মুচড়িয়ে  ছিঁড়ে ফেলা ঠিক নয়। এতে আঘাতজনিত কারণে মোচা পরবর্তীতে নষ্ট  হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।মোচা সংগ্রহের পর পুরোগাছ, মোচা হতে ছাড়ানো খোসা ও বাতিলকৃত মোচা উওম গো-খাদ্য হিসেবে  ব্যবহার করা যায়।                                                                                                                                                                                                                           
 

প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মোচা সংরক্ষণ
খোসাসহ বা খোসাবিহীন  মোচার তাপমাত্রা মাঠ থেকে সংগ্রহের ১ হতে ২ ঘণ্টার মধ্যেই ঠাণ্ডা পানি বা বরফযোগে  কমিয়ে ০ থেকে ১ ডিগি সেন্ট্রিগ্রেড এর মধ্যে আনতে হয়। এই প্রক্রিয়া প্রিকুলিং  নামে পরিচিত। তবে ঠাণ্ডা পানিযোগে প্রিকুলিং প্রক্রিয়া অধিক ফলপ্রসূ হয়। এই প্রক্রিয়ায় মোচাগুলো ঠাণ্ডা পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হয়। স্বাভাবিকভাবে খোসাসহ  মোচা  অপেক্ষা  খোসাবিহীন মোচার প্রিকুলিং দ্রুত  সম্পন্ন হয়। তবে খোসাবিহীন  মোচার ক্ষেত্রে অধিক  সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। ফসল সংগ্রহের পর  প্রিকুলিং প্রক্রিয়ার প্রতি  ঘণ্টা বিলম্বের কারণে মোচার  সংরক্ষণের  সময় (self life) ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত  কমে যায়। তাছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধির  সাথে সাথে মোচায় বিদ্যমান চিনি  (sugar) দ্রুত স্টার্চে  রূপান্তরিত হয়। ফলে মিষ্টতা  কমে যাওয়ায়  মোচার স্বাদ ও গুণাগুণ নষ্ট হয়। তাই টাটকা  মোচার ক্ষেত্রে সংগ্রহের  পর হতে ভোক্তার  হাতে পৌঁছার পূর্ব  পর্যন্ত বাজারজাতকরণের  সকল স্তরে নিম্ন তাপমাত্রায় (৫-৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) ও উচ্চ আপেক্ষিক  আর্দ্রতায় (৯০ শতাংশ)  সংরক্ষণ করতে  পারলে ৭ থেকে ১০ দিন ভাল থাকে।   
 

ফলন
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে বাছাইকৃত জাতগুলো হতে হেক্টর প্রতি খোসাসহ ৩-৭ টন এবং খোসাবিহীন অবস্থায় ০.৬-১.৮ টন পর্যন্ত মোচা পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া একই সাথে গো-খাদ্য হিসেবে হেক্টরপ্রতি ১৫-২৫ টন সবুজ গাছ পাত্তয়া সম্ভব।   

                                                                                              
বাংলাদেশে বেবী ভুট্টার চাষকৃত জাত থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত এবং বাজারমূল্যও অনেক। সুতরাং বিভিন্ন উৎস থেকে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও মূল্যায়ন, সংকরায়ণের  মাধ্যমে উপযোগী নতুন জাত সৃষ্টি এবং কৃষক পর্যায়ে তা সহজলভ্য করতে পারলে বীজ আমদানিতে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্র্রয় হবে। সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেবী ভুট্টা হতে তৈরি বিভিন্ন খাবার এবং প্রস্তুতপ্রণালী সাধারণ মানুষের গোচরে আনার ও খাবার হিসেবে একে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করা যেতে পারে। একই সাথে কৃষকদের  মাঝে  প্রচলিত অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেবী ভুট্টা চাষে অর্থনৈতিক লাভ তুলে ধরতে  পারলে তা এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এছাড়া নতুন ফসল বলে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, উৎপাদিত  পণ্যের ন্যায্যমূল্য ও বাজারজাতকরণের নিশ্চয়তা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে বেবী ভুট্টা পুষ্টির চাহিদা ও খাদ্য ঘাটতি মিটাতে যেমন সাহায্য  করবে তেমনি গ্রামীণ দরিদ্র  জনগোষ্ঠীর বিকল্প নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং রপ্তানির মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও  সহায়তা করতে পারবে।

ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম মতিন১
        ড. মো. আমিরুজ্জামান২

১বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মহাপরিচালকের দপ্তর, ২মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, মোবাইল নম্বর ০১৭১৮-৩৫৮৪৫৬ ই-মেইল: quamrul_islam76@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon